টাংগুয়ার হাওর
১৯ তারিখ রাতের উপবন ট্রেনে রওনা হই অামরা ৯ জন। ট্রেনে যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো সারা রাত গল্প, গান, অাড্ডায় কাটাবো তাই। ট্রেনের বগিতে অার ৩ গ্রুপ ছিল যারা সিলেট ঘুরতে যাচ্ছিল। এই ৪ গ্রুপ মিলে অামরা কাপাইসি জাস্ট। যাই হোক সকাল ৫.২০ এ ট্রেন থেকে নেমে হেটে সিলেটের কিন ব্রিজ পার হলাম, তারপর সিএনজি করে চলে গেলাম পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট এ, এখানের খাবাবের অনেক নাম ডাক, দামেও সস্তা। ওখানে ৫৫ টাকায় মুরগির বিরিয়ানি এক্সটা সহ খেলাম। সাথে দুপুরের জন্য তেহেরি নিলাম এক্সটা সহ। দাম নিল ৭০ টাকা। ওখান থেকে সিএজি করে চলে গেলাম সুনামগঞ্জ গামি বাস্ট স্টেন্ডে। ৭০ টাকা দামে বাসে উঠে পরলাম। ২ ঘন্টা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চলে গেলাম সুনামগঞ্জ নতুন ব্রিজের মোড়। ওখান থেকে সিএনজি করে চলে গেলাম তাহেরপুর। জন প্রতি ভাড়া নিয়েছিল ১০০ করে, সময় লেগেছিল ১ঘন্টা ৪৫ মিনিট।
অামাদের অাগেই বোট ভাড়া করা ছিল এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে।টাংগুয়ারে তারা নতুন নৌকা নামিয়েছে। মজার ব্যাপার হলো নৌকার প্রথম যাত্রী অামরাই ছিলাম। ভাই অামাদের কাঁচাপাকা অামের ভর্তা দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। নৌকাটা বেশ বড় ছিল। ২০-২২ জন অারামসে যাওয়া যেত। তারপর ৪ বেলা খাওয়ার জন্য বাজার করে নিলাম অামরা ২৬৫০ টাকার। সাথে বাজারের কল থেকে ২০ লিটার পানিও ভরে নিলাম(১০ লিটার কিনেছিলাম অারো).। দুপুর ১২ টায় অামাদের যাত্রা শুরু। সবাই সাধারনত যাত্রা করে টাংগুয়ারের পথ ধরে, অামরা করলাম জাদুকাটা নদীর পথে। ২ ঘন্টায় পৌঁছাইলাম জাদুকাটা নদীর কাছে।
(সবাই সাধারনত হুন্ডায় নিচের জায়গাগুলো ঘুরে,অামরা নৌকা করেই ঘুরলাম)
চারপাশের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হতে শুরু করলাম। শত ক্লান্তির মাঝেও নেমে গেলাম জাদুকাটা নদীতে, সাথে নিয়ে যাওয়া ফুটবল দিয়ে ১০ মিনিটের একটা ম্যাচ খেলে ফেললাম ভেজা বালিতে। সবাই ক্লান্ত শরীরে নেমে পরলাম শীতল পানিতে। ৩০ মিনিট ঝাপাঝাপি শেষে নৌকায় যেয়ে দুপুরের খাওয়া শেষ করলাম। পাশেই দাড়িয়ে ছিল বারেক টিলা। বারেকটিলার উপর থেকে জাদুকাটা নদী একরকম জাদুর মতোই দেখায়, তারপর সাথে মেঘালয়ের পাহাড়গুলো। ৪৫ মিনিট বারেকটিলায় ঘুরে নৌকায় করে রওনা হই শিমুলবাগানের পথে। ওখানে ঘুরতে ঘুরতে তখন বিকেল হয়ে গিয়েছে। এখন ফিরতে হবে টেকেরঘাটে। ক্লান্ত শরীরে সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম বলে সূর্যাস্তটা মিস করি। ৭.৩০ এ অামরা টেকেরঘাট পৌছাই। রাতটা এখানেই থাকবে অামরা। সকলে বাজার থেকে ঘুরে এসে গানের অাসর বসালাম। বলা হয়নি অামরা রাতের জন্য ৪৪০ টাকা দিয়ে ১ কেজি ৭০০ গ্রামের একটা গজার মাছ কিনি। বাবুর্চি ওএা রান্না করছিল রাতে। গল্প গান করতে করতে রাত ১২ টা। রাতের অাকাশে কোটি তারা,সাথে ভারতের বর্ডারের লাইটগুলো চমৎকার কম্বিনেশন ছিল। অামাদের নৌকা তখন একটু দুরে নোঙ্গর করা ছিল। হুহু করে বাতাস বইছিল অার অামরা গান কররছিলাম। রাত ২ টায় কেও নৌকার ভেতরে কেও বা নৌকার ছাদে ঘুমিয়ে পরি। অামরা ৪ জন নৌকার ছাদেই ছিলাম। অাচমকা রাত ৩ টায় বৃষ্টি শুরু, প্রচন্ড ঝড় শুরু হলে মাঝি তীরে নিয়ে যায় নৌকা।
পরদিন ঘুম থেকেই উঠেই চারপাশ দেখে অবাক হতে থাকি। এতোটা সুন্দর হবে কখনো ভাবি নি। তখন হালকা হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল একটু পররপর। বৃষ্টির মধ্যেই দুপুর অার রাতের বাজার করতে গেলাম। দুপুরের জন্য ২০০ টাকায় ১ কেজি হাওরের টাটকা ছোট মাছ অার রাতের জন্য ৬০০ টাকায় দুইটা দেশি হাস কিনলাম। ফিরে এসে দেখি সকালের খিচুরি চেয়ে অাছে তার স্বাদ নেওয়ার জন্য।মাছের মাথা দিয়ে রান্না খিচুরি ডিম দিয়ে একরকম জ্বিবে লেগে ছিল। অামিই ৩ প্লেট খাইছি । খাওয়া শেষে সবাই মিলে রওনা হই লাকমাছড়ার পথে, ২০ মিনিট হেটে পৌছালাম লাককমাছড়া। ওখানেও ১০ মিনিটের অারেকটা ফুটবল ম্যাচ খেলি। লাকমাছড়াতে ৩০ মিনিট শরীর ভিজিয়ে চলে অাসি নীলাদ্রির কাছে। নীলাদ্রি কেন এতো সুন্দর অামার প্রশ্ন রয়ে গেল। একপাশে পাহাড় অারেকপাশে উচু মাটির ডিপি। লেকের পানি সবুজ হয়য়ে থাকে। নীলাদ্রি অনেক গভীর বলে এখানে গোসল করা একটু রিস্কি, তাও অামরা গলা পানিতে নেমে গোসল সেরে নিলাম। ছবি তোলার জন্য জায়গাটা জোশ। ১ টায় নৌকায় চলে যাই অামরা।
১ টায় রওনা হই টাংগুয়ার ওয়াচ টাওয়ার এর উদ্দেশ্যে। হাওরের বিস্তৃত পানির মধ্য দিয়ে যাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশের মতোনা! ৩ টায় পৌছে যাই ওয়াচ টাওয়ারের কাছে। ওয়াচ টাওয়ারের পাশেই জলার বন, যারা রাতারগুল যাননি তারা এখানে ঐ ফিল উপভোগ করতে পারেন। অামাদের নৌকা গাছের চিপায় রেখে দুপুরের খাওয়া সেরে নেই অামরা। তারপর কিছুটা রোদ কমার পর ওয়াচ টাওয়ারে চলে গেলাম, নেমে পরলাম পানিতে। গলা পানিতে গোসল করে সাতার কাটলাম গভীর পানিতে। ভেসে রইলাম হাওয়ের শীতল পানিতে, সে এক অসাধারন অনুভূতি। ১ ঘন্টা পানিতে কাটিয়ে ছোট নৌকা নিয়ে জলারবনে চলে গেলাম। ছোট ছোট ছেলারা ডিঙ্গি নিয়ে অাসবে অাপনার কাছে। বিকালটায় এখানে নীরবতা বিরাজ করে। ১৫ মিনিট ডিঙ্গিতে থেকে অামাদের নৌকায় ফিরলাম। তখন সূর্য প্রায় ডুবে যাচ্ছে। ঐ অনুভুতিটা কেও না গেলে তাকে বুজানো যাবেনা। নৌকা চলছে অার চারদিকে গোধুলী। ৮ টায় চলে অাসলাম তাহেরপুর এ। রাতটা বাজারের পাশায় থাকবো অামরা। তাই নেমে বাজারে সন্ধার নাস্তা করে নিলাম। তারপর উঠে পরলাম নৌকায়। শুরু হলো গান অাড্ডা। ১১ টা পর্যন্ত ছাদে ছিলাম অামরা,তারপর শুরু মুষুলধারে বৃষ্টি। নৌকার ভেতর থেকে সেটা অনুভর করলাম অামরা। ১২ টায় অার্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ বাজারে দেখে কারও মন খারাপ,কেও বা মহাখুশি। এভাবেই রাত কেটে গেল। পরদিন সকাল ৭ টায় উঠে পরি। নৌকার খরচ মিটিয়ে সিএনজিতে উঠে পরি। প্লেন ছিল সুনামগঞ্জ থেকে বাসে ঢাকা এসে পরবো,কিন্তু এবার কপাল ভাল ছিলনা।ঈদের সিজন হওয়ায় টিকেট না পেয়ে সিলেট ফিরতে হলো উল্টো। পরে ওখান থেকে বাসে করে ঢাকা।
বি:দ্র: হাওয়ের পানিতে দুর থেকে অামরা কিছু বোতলকে পানকৌড়ি ভেবে ভুল করি। এইগুলো অামাদের পর্যটক এরই কাজ। তাই পাস্টিক বা পলিথিন পানিতে না ফেলি।
asif vai nowkar owner: 01820106131
খরচ : ঢাকা-সিলেট ট্রেন: ৩০০
সিলেটে নাস্তা: ৫৫
দুপুরের খাওয়া : ৭০
সিএনজি :৩০
সিলেট- সুনামগঞ্জ :৭০
সুনামগঞ্জ -তাহেরপুর সিএনজি: ১০০
বাজার(৪ বেলা): ২৬৫০/৯- ৩০০
গজার মাছ: ৪৪০/৯- ৫০
ছোট মাছ+ হাঁস: ৮৫০/৯- ১০০
ছোট নৌকা: ৮০/৯- ১০
সন্ধার নাস্তা: ১৬০/৯- ১৫
বাবুর্চি :১০০০/৯- ১১০
নৌকা: ৮৫০০/৯ - ৯৫০( bishes onurudhe amra 2 rat thakii)
তাহেরপুর-সুনামগন্জ: ১০০
সকালের নাস্তা: ৩০
সুনামগন্জ-সিলেট: ৭০
সিলেট সিএনজি: ৩০
সিলেট- ঢাকা: ৪৫০
খরচ : ঢাকা-সিলেট ট্রেন: ৩০০
সিলেটে নাস্তা: ৫৫
দুপুরের খাওয়া : ৭০
সিএনজি :৩০
সিলেট- সুনামগঞ্জ :৭০
সুনামগঞ্জ -তাহেরপুর সিএনজি: ১০০
বাজার(৪ বেলা): ২৬৫০/৯- ৩০০
গজার মাছ: ৪৪০/৯- ৫০
ছোট মাছ+ হাঁস: ৮৫০/৯- ১০০
ছোট নৌকা: ৮০/৯- ১০
সন্ধার নাস্তা: ১৬০/৯- ১৫
বাবুর্চি :১০০০/৯- ১১০
নৌকা: ৮৫০০/৯ - ৯৫০( bishes onurudhe amra 2 rat thakii)
তাহেরপুর-সুনামগন্জ: ১০০
সকালের নাস্তা: ৩০
সুনামগন্জ-সিলেট: ৭০
সিলেট সিএনজি: ৩০
সিলেট- ঢাকা: ৪৫০
মোট: ২৯০০ টাকা( প্রায়)
Credit: তানভীর হাসান
Comments
Post a Comment
Thank you for comment. After reviewing your comment it will be published.