সিকিম ভ্রমণ (ট্যুর গাইড)

শিলিগুড়ি থেকে আমাদের যাত্রা শুরু
সিকিম যেতে হলে প্রথমে শিলিগুড়ি থেকে যেতে হবে। ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি কিভাবে যেতে হয় তা আমাদের মোটামুটি সবারই জানা। তা নিয়ে আলোচনার না করলেও হয়।
১ম দিনঃ বাংলাবান্ধা - ফুলবাড়ি বর্ডার ক্রস করতে আমাদের দুপুর ২ টা বেজে যায়। শিলিগুড়ি SNT অফিস থেকে সিকিম যাওয়ার পারমিশন নিয়ে একটা শেয়ার ট্যাক্সিতে জনপ্রতি ২৫০ রূপিতে 5 জন গ্যাংটকের উদ্দেশ্য রওনা হলাম। পথে খাওয়া ৫০ রূপি।
গ্যাংটক পৌছালাম প্রায় রাত দশটায়। তবে ড্রাইভার আপনাকে MG -Marg পর্যন্ত নামিয়ে দিবে না। নামিয়ে দিবে MG -marg er ২/৩ কিঃমিঃ আগে দেওরালি নামক একটি জায়গায়। (কারণ তাদের গাড়ি নাকি MG marg পর্যন্ত পারমিট নাই)। দেওরালি থেকে জনপ্রতি ৩০ রূপিতে চলে গেলাম সেই কাংখিত MG Marg এ। সময় লাগে ১৫ মিনিট এর মত। এরপর কয়েকটা হোটেল দেখে ৯০০ রুপিতে ৫ জনের জন্য ২ টা ডাবল বেডের একটা হোটেল নিলাম। এরপর ডিনার করে যখন হোটেল থেকে খেয়ে দেয়ে বের হই তখন ৪ বাংলাদেশির সাথে দেখা। কথাবার্তা বলে তারাও লাচুং আর ইয়ামথাং যেতে ইছছুক। অর্থ্যাৎ আমরা এখন ৯ জন মিলে লাচুং আর ইয়ামথাং যাবো।
খরচ ১ম দিনঃ
১/ শিলিগুড়ি থেকে শেয়ার ট্যাক্সিতে- ২৫০ রূপি
২/ পথে লাঞ্চ- ৫০ রুপি
৩/ দেওরালি থেকে MG - marg - ৩০ রূপি
৪/ রাতে ডিনার- ১৩০ রূপি
৫/ হোটেল ভাড়া-( ৯০০÷৫) ১৮০ রুপি
টোটালঃ ৬৪০ রুপি।
২য় দিনঃ সকালে হোটাল থেকে বের হয়ে পাহাড়ের যে ভিউটা দেখলাম,মনে হলো অফ সিজনে আমার সিকিম ভ্রমণ মোটেও বৃথা নয়। যাইহোক নাস্তা,পানি সেরে হোটেলের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে লাচুং আর ইয়ামথাং ভ্যালির জন্য দরদাম করে একটা প্যাকেজ নিয়ে নেই ১২৫০০ চাইলেও শেষ পর্যন্ত ১১৫০০ তে নিয়ে আসতে পারি।। ৯ জনের প্যাকেজ
(আমরা ৫ বন্ধু আর সেই গত রাতে দেখা হওয়া ৪ বাংলাদেশী)= এই মোট ৯ জন।
""দুপুরের লাঞ্চ, রাতের ডিনার,পর দিন সকালের ব্রেকফাস্ট আর দুপুরের লাঞ্চ,+ লাচুং এ একরাত থাকা ৯ জনের জন্য তিন রুম এবং আসা যাওয়ার জন্য গাড়ি এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত ""
আরও কয়েক টা এজেন্সির সাথে কথা বলেছিলাম কেউ ১২০০০ নিচে নামে নি।
প্যাকেজ কনফার্ম করে বের হয়ে পড়লাম সাইট সিন এর জন্য। একটা ৬ সিটের ইকো ঠিক করলাম দরদাম করে ৮০০ তে রাজি হল। ৬/৭ টা প্লেস দেখলাম। খুব ভালো লাগলো সৃষ্টিকর্তার অপূর্ব সৃষ্টি দেখে। যাইহোক সন্ধ্যায় আমরা আবার হোটেলে ফিরে এলাম।


২য় দিন খরচঃ 
১/ সকালের নাস্তা- ৫৫ রূপি
২/সাইট সিনের জন্য ট্যাক্সি (৮০০÷৫) ১৬০ রূপি
৩/রাতের খাবার আর দুপুরের লাঞ্চ ১৭০ রুপি
৪/ হোটেল ভাড়া (১০০০÷৫) ২০০ রুপি
টোটালঃ ৫৮৫ রুপি।
৩য় দিনঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে আমরা লাচুং যাবার উদ্দেশ্যে MG marg এর ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে ছোট ট্যাক্সিতে করে চলে যাই বাজরা ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে। কারণ লাচুং যাওয়ার সব ট্যাক্সি অই স্ট্যান্ড থেকে ছাড়ে,MG-marg থেকে নয়।
লাচুং যেতে যেতে পথে যে দৃশ্যগুলো দেখলাম তা লিখার মাধ্যমে বোঝানো দুরূহ। এর মাঝে নাগা ফলস (ঝর্ণা) দেখে আমিতো পুরো চমকে গেছি।। এত সুন্দর আর বড় ঝর্ণা আমার লাইফে দেখেনি। পথে ছোট, বড় আরো অনেক ঝর্ণা দেখলাম বাট নাগা ফলসটাই বেষ্ট।
সন্ধ্যা ৭ টার দিকে আমরা লাচুং এর একটি হোটেলে পৌছাই। হাড় কাপানো শীত। একটু হাটাহাটি করতে করতে সেখানের একটি দোকানে গিয়ে হাল্কা নাশতা করি। অই খানের এক বাসিন্দার মুখে বাংলাদেশের মেলামাইনের সুনাম শুনে আনন্দে বুক ভরে গেল।
বাংলাদেশের যেই মেলামাইন পুরো সেট আমরা ৩০০/৪০০ টাকায় কিনি, তারা শুধু একটি বাটি দেখালো সেটা নাকি ৩০০ রুপি দিয়ে কিনে।😲 এত কদর বাংলাদেশের মেলামাইনের কারণ সে বলল,, এটা অনেক দিন টিকে। যাইহোক তার সাথে কথা বলে রাতে ডিনার করে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি কারণ খুব ভোরে আমাদের ইয়ামথাং যেতে হবে।

৩য় দিন খরচঃ
১/ প্যাকেজ (১১৫০০÷ ৯)= ১২৮০ রুপি
২/সকালের নাস্তা = 30 রূপি ৩/লাচুং যাবার জন্য ট্যাক্সি স্ট্যান্ড পর্যন্ত = ২০ রুপি
৪/ সন্ধার নাস্তা = ৩০ রুপি
টোটালঃ ১৩৬০ রুপি।
৪র্থ দিনঃ৷ ভোরে ঘুম থেকে উঠি চারদিকে সব কিছু মেঘে ঢাকা। গাড়িতে চড়ে ইয়ামথাং এর পথে। মনে হল সকালের পাহাড়ের সৌন্দর্য্য আরো কয়েক গুন বেড়ে গেছে।
ঠিক ১:২০ মিনিট পর সেই কাংখিত ইয়ামথাং ভ্যালি। আমার চোখে ইয়ামথাং ভ্যালিকে এক টুকরো স্বর্গ মনে হল। উঁচু উঁচু পাহাড়, পাহাড়ি নদী, আর এর মাঝে পাহাড়ের চূড়ায় এক খন্ড বরফ দেখে মনে হল অফ সিজনে আমার Unplanned Sikkim ট্যুর সাকসেস।
বরফ দেখেনি তবে গ্রীন সিকিমও যে এত সুন্দর তা ধারণা ছিল না। এক কথায় বরফ ছাড়া গ্রীন সিকিম দেখে আপনি হতাশ হবেন না গ্যারান্টি। ১.৩/২ ঘন্টা পর সেখান থেকে আবার লাচুং হয়ে লাঞ্চ করে গ্যাংটক এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
জিরো পয়েন্ট যেতে পারেনি কারণ সেদিন রাতেই দার্জিলিং যাবো বলে আমাদের হাতে সময় ছিলো না।
(আপনি যদি ইয়ামথাং থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত যেতে চান তাহলে ড্রাইভারকে প্যাকেজের বাইরে এক্সট্রা ২২০০/২৫০০ পে করতে হবে, পুরো টিমের জন্য। সে ৩০০০ চাইবে)
সন্ধ্যায় গ্যাংটক এসে পৌছাই। সবার সিদ্ধান্তে আর সেইরাতে দার্জিলিং যাওয়া হয় নি। রাতে গ্যাংটকে রুম নেই মাত্র ৬৫০ রুপিতে ৫ জনের ৩ টা বড় বড় ডাবল বেডের। এরপর ডিনার করে ঘুম সকালে দার্জিলিং যাব বলে।


৪র্থ দিন খরচঃ
১/ হোটেল ভাড়াঃ (৬৫০÷৫)=১৩০ রুপি
২/ ডিনারঃ =১৫০ রুপি
টোটালঃ ২৮০ রুপি।
৪ দিনের মোট খরচঃ ৬৪০+ ৫৮৫+১৩৬০+২৮০=২৮৬৫ রুপি।
★যদি জিরো পয়েন্ট যেতাম তাহলে আরো সর্বোচ্চ ৩০০ রুপি বেশি যেত। মানে ৩২০০ রুপিতে সিকিম কাভার করা সম্ভব জিরো পয়েন্ট সহ এই সিজনে।😲
আমার ৩১০০ রুপি গেছে জিরো পয়েন্ট ছাড়া ব্যাক্তিগত খরচ সহ🤗
এরই মাঝে আমাদের সিকিম পার্ট শেষ।
পর দিন সকালে আমরা চলে যাই দার্জিলিং জনপ্রতি ২৫০ রূপিতে শেয়ার ট্যাক্সিতে।



" সিকিম এর MG marg দেখে আমার মনে হয়েছে আমি মনে হয় ইউরোপে আছি । এত পরিষ্কার আর সাজানো গুছানো। কেন লেগেছে জানেন? তারা যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে না,,প্লাস্টিক ব্যবহার করে না, আর ময়লা ফেললে জরিমানার আইন আছে। তাই যেখানেই যাই না কেন আমরা অন্তত কোথাও কোন থু থু, ময়লা -আবর্জনা ফেলব না।





Travelers of Bangladesh

Comments

Popular Posts